পদ হারানোর গুঞ্জন ছড়ানোর দুদিন পর অবশেষে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তবে ঝেড়ে কাশলেন না, অর্থাৎ পরিষ্কার করে কিছু বললেন না। জিউয়ে রাখলেন রহস্য। আর বললেন, যে খবর ছড়ানো হয়েছে তা ‘প্রোপাগাণ্ডা’।
রোববার (১ জুন) নিজের পদ হারানোর গুঞ্জন নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন রাকিব।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন ছাত্রদলের ভালো একটা নিউজ থাকে কিংবা বিগত সময়ের ভালো কিছু থাকে, সেগুলো কিন্তু আমরা সংবাদ মাধ্যমে খুব একটা দেখতে পাই না। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রদলের কত ভূমিকা, সেগুলো কখনো সংবাদমাধ্যমে স্থান পায় না। কিন্তু একটা প্রপাগাণ্ডাকে ইস্যু করে নিউজ হয়ে যায়।’
রাকিবের অভিযোগ, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছর যে ধরনের কালচার ছিল, সেই কালচার থেকে সংবাদমাধ্যম এখনো বের হতে পারেনি। সবাই না, অল্প কিছু সংবাদমাধ্যম রয়েছে। আমি আশা রাখব, অবশ্যই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা আরও বেশি সতর্ক হবে এবং প্রপাগাণ্ডা-নির্ভর যে সংবাদ পরিবেশন, তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে।’
এ সময় তারুণ্যের সমাবেশ অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে আমি ওই রাতেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যাই। সে কারণে বেলা ১১টার প্রেস কনফারেন্স আমি মিস করি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে যে কর্মসূচি ছিল, সে দুটি কর্মসূচি আমি মিস করি। পরবর্তীতে আমি পার্টিকে জানিয়েছি। আমি নিজে আমার সাধারণ সম্পাদকসহ আমার যে কলিগরা রয়েছে, তাদের কল দিয়ে বলেছি যে- আগামীকালের প্রগ্রামে আমি যাব না। আমি বিষয়টি পার্টিকেও জানিয়েছি। এটিকে ইস্যু করে পরে দেখলাম নিউজ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন মানুষ তো অসুস্থ হতে পারে। আমি কি রোবট? আমি আমার রাজনীতির জীবনে বিগত সাড়ে ১৫ বছর বলেন কিংবা এই সময় আমি অসুস্থ হয়েছি বলে মনে পড়ে না। আমি চার বার প্রায় এক বছরের মতো জেল খেটেছি। কারাগারেও আমি অসুস্থ থাকতাম না। কিন্তু মানুষ তো অসুস্থ হতেই পারে। এটাকে ইস্যু করে নিউজ করা হয়, এতে আমি মর্মাহত হয়েছি এবং খুবই কষ্ট পেয়েছি।’
রাকিব বলেন, ‘ছাত্রদলে কখনো কোনো বিভেদ ছিল না, আগামীতেও থাকবে না। আমরা আমাদের মতামতের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা করি। সেখানে ভিন্নমত আসতে পারে, একটা সিদ্ধান্তে ভিন্নমত আসতে পারে, একটা কর্মসূচিতে ভিন্ন পন্থা-পরামর্শ আসতে পারে। আমরা সেই আলোকে কর্মসূচিগুলো সাজাই। বিশেষ করে আমরা সুপার ফাইভ রয়েছি, আমরা শীর্ষ নেতৃত্ব রয়েছি, কেন্দ্রীয় সংসদ রয়েছে, আমরা সেই আলোকে কর্মসূচি প্রণয়ন করি। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তারা পরামর্শ দেবে। কিন্তু কখনো আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যে বা যারা এই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রপাগাণ্ডাকে ইস্যু করে নিউজ করে, ভেবেছে ছাত্রদলের মাঝে কোনো বিভেদ হয়েছে, উল্লসিত হয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলছি, ছাত্রদলে কখনো বিভেদ ছিল না, আগামীতেও থাকবে না ইনশাআল্লাহ।’
এর আগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাচিল উদ্দীন নাছিরও রোকিবুল ইসলামের পদ হারানোর গুঞ্জনকে ‘প্রোপাগাণ্ডা’ হিসেবে দাঁগিয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ‘যে খবর ছড়িয়েছে, তা শতভাগ ভুয়া।’
মূলত ঘটনার সূত্রপাত তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে। গত বুধবার (২৮ মে) ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই আয়োজনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে উপস্থিত থেকেও ছাত্রদল সভাপতি রাকিব সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনা ছাত্রদল ও বিএনপির ভেতরে রাকিবের প্রতি ক্ষোভকে চূড়ান্ত রূপ দেয়। তারই জেরে তাকে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এও জানা যায়, রাকিবকে নিষ্ক্রিয় করে সিনিয়র সহসভাপতি আবু আহসান মোহাম্মদ আফসান ইয়াহিয়াকে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।